
চলচ্চিত্র

গোড়ার দিকের চলচ্চিত্র ছিল সাদা-কালোয় তোলা, দৈর্ঘ্য ছিল এক মিনিটেরও কম, আর ছিল নির্বাক। ১৮৯০ সাল থেকেই একাধিক শট সম্বলিত, বেশ কয়েক মিনিট দৈর্ঘ্যের ছবি তৈরী হতে থাকে। ১৮৯৮ সালে তৈরী হয় প্রথম ঘূর্ণায়মান ক্যামেরা যা দিয়ে প্যানিং শট নেওয়া সম্ভব ছিল। ১৮৯৭ সালেই প্রথম ফিল্ম ষ্টুডিও তৈরী হয়ে যায়। স্পেশাল এফেক্ট, এক ঘটনাক্রম থেকে অন্য ঘটনাক্রমে ছবির কন্টিন্যুইটি বা অবিচ্ছেদ্যতা বজায় রাখা, ইত্যাদি নানারকম প্রয়োগকৌশলের ব্যবহার শুরু হয়ে যায়।
১৯০০ সাল থেকেই কন্টিন্যুইটির মাধ্যমে ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং ক্লোজ-আপ শটের ব্যবহার শুরু হয়ে যায় (অনেকে বলেন এর উদ্ভাবক ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ)। এই সময়ের বেশির ভাগ ছবিকেই ‘চেজ ফিল্ম’ বলা যেতে পারে। প্রথম একাধিক রিল সম্বলিত কাহিনীচিত্র ১৯০৬ সালে অস্ট্রেলিয়া-তে তৈরী হয়। ১৯০৫ সালে পিটসবার্গে স্থাপিত ‘দ্য নিকেলোডিয়ান’ কে বলা হয় প্রথম স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ যেখানে সফলভাবে শুধুই চলচ্চিত্র প্রদর্শন শুরু হয়েছিল। ১৯১০ এর মধ্যেই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম পর্দায় লেখা শুরু হয়, আর চলচ্চিত্র-তারকা হিসাবে তাদের জনপ্রিয়তার রাস্তা খুলে যায়। ১৯১০ থেকে নিয়মিত সংবাদচিত্র প্রদর্শিত হতে থাকে এবং অচিরেই তা’ নতুন সংবাদমাধ্যম হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে যায়। ঐ সময়েই মার্কিন চলচ্চিত্রগুলি অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের (ফ্রান্স ছাড়া) শেয়ার মার্কেটের বৃহত্তম ভাগীদার হয়ে দাঁড়ায়।
ঐ একই সময়ে কৃত্রিম আলোকে চিত্রগ্রহণ জাতীয় আরও অনেক নতুন প্রয়োগকৌশল জন্ম হয়। তখনই কৃত্রিম আলোয় আগুন জ্বলার বিভ্রম সৃষ্টি করা বা বিশেষ বিপদসূচক দৃশ্যে আলো কমিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরী (লো-কী লাইটিং) করা সম্ভব হয়েছিল। গল্প বলার নতুন মাধ্যম হিসাবে চলচ্চিত্র যাতে দর্শকের কাছে সহজবোধ্য হয়ে ওঠে তারজন্য বিশেষজ্ঞ লেখক নিযুক্ত হওয়া শুরু হল, যারা বই হিসাবে প্রকাশিত জটিল নাটক-নভেলকে সরল করে ছোট আকারে নিয়ে আসতেন, যাতে একটিমাত্র রিলের মধ্যে তার চিত্ররূপ আঁটানো যায়। চলচ্চিত্রেও জঁর বা বিশেষ পদ্ধতি অনুযায়ী শ্রেণীবিন্যাস চালু হল, যদিও কমেডি আর ড্রামারই প্রাধান্য ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চলচ্চিত্র শিল্পে একটা জটিল রূপান্তর ঘটে যায়। এক রিলের ছোট ছবির জায়গা নেয় পূর্ণদৈর্ঘ্যের কাহিনীচিত্র। প্রেক্ষাগৃহ আকারে বড় হতে থাকে আর পাল্লা দিয়ে বাড়ে টিকিটের দাম। এক শট থেকে অন্য শটে কন্টিন্যুইটি বা অবিচ্ছেদ্যতা বজায় রাখার প্রয়োগকৌশলের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ১৯১৪ সালের মধ্যে এই ধরণের ধারাবাহিকতা যুক্ত ছবিই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রধান ঘরানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়।

যুদ্ধের সময়ে প্রচারমূলক ছবির হাত ধরে যুক্তরাজ্যে চলচ্চিত্র শিল্পে নবজাগরন আসে, প্রচুর বাস্তবানুগ যুদ্ধ-সম্পর্কিত চলচ্চিত্র তৈরী হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশভক্তিপূর্ণ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারমূলক ছবিও তৈরী হতে থাকে। ১৯৫০ এর আশেপাশে হাউস আন-আমেরিকান এক্টিভিটিস কমিটি হলিউডে তদন্ত চালিয়ে প্রচুর কলাকূশলীকে কালো-তালিকাভুক্ত করে। বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই দূরদর্শনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সামনে চলচ্চিত্রশিল্প কিছুটা বিপন্ন হয়ে পড়ে, বেশ কিছু কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যায়, অনেক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যায়। আবার অন্যদিকে ১৯৫০ এর দশক থেকে বিশ্ব জুড়ে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে স্বর্ণযুগ শুরু হয়ে যায়।
১৮৮৮ সালে ফরাসী উদ্ভাবক লুই লা প্রিন্স একটি ছোট ছবি তোলেন যার নাম ছিল রাউন্ডহে গার্ডেন সিন। এখনো পর্যন্ত টিঁকে থাকা ছবিগুলির মধ্যে প্রাচীনতম হিসাবে এই ছবিটি গিনেস বিশ্ব রেকর্ড এর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। যদিও ফরাসী নির্মাতা লুই লুমিয়ের -এর ১৮৯৫ সালে তৈরী সর্তি দে লুসিনে লুমিয়ের দে লিও (লিও-র লুমিয়ের ফ্যাক্টরি থেকে প্রস্থানরত শ্রমিকরা) ছবিটিকে প্রথম সত্যিকারের চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।
চলচ্চিত্রের জন্ম

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "চলচ্চিত্র"
Post a Comment